বাংলাদেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে একশোর বেশি মানুষ নিহতের পাশাপাশি আটক হয়েছে কয়েক হাজার ব্যক্তি।
গত মাসের মাঝামাঝি এ অভিযান শুরুর পর সরকারের তরফ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
মাদক বিরোধী অভিযান বিশেষ করে ইয়াবার জন্য আলোচিত কক্সবাজার এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে কাউন্সিলর মো: একরামুল হক হত্যার ঘটনায়।
এ ঘটনার পর ভয় আর আতঙ্কে মাদক মামলায় আটক থাকা আসামীরা এখন আর জামিনের আবেদনই করতে রাজী হচ্ছেন না বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
কক্সবাজারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলছেন অভিযান শুরুর পর আসামীদের জামিন আবেদন বা মুক্তির জন্য চেষ্টাই কমে গেছে।
পাবলিক প্রসিকিউটর মমতাজ আহমেদ বলছেন, ব্যাপক অভিযানের কারণে আদালত জামিন আবেদন প্রায় নেই বললেই চলে।
একজন আইনজীবী বলছেন আসামীদের জামিনের জন্য তাদের পক্ষে যারা আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন তাদেরই এখন পাওয়া যাচ্ছেনা।
জেল সুপার মি: আখন্দ বলছেন, আজ রোববার কক্সবাজার কারাগারে মোট বন্দী সংখ্যা তিন হাজার ১৭৩ জন এবং মোট বন্দীর মধ্যে বেশিরভাগই অর্থাৎ ৬৫ ভাগই মাদক বিশেষ করে ইয়াবা মামলার আসামী।
তিনি বলেন মাদক বিরোধী অভিযান শুরুর আগে গড়ে প্রতিদিন ১৫/২০ জন জামিনের আবেদন জানাতো আদালতে বা তারা মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতো।
কিন্তু এখন গত কয়েকদিন আসামীদের পক্ষে এ ধরনের তৎপরতা একেবারেই কমে গেছে।
“অভিযান শুরুর পর থেকে প্রতিদিন মাত্র ১/২ জন আসামীর মধ্যে এ ধরণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।”
জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর মমতাজ আহমেদ বলছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে আদালতে আসামী পক্ষের আবেদন অনেকখানিই কমে গেছে।
যদিও তিনি মনে করেন মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তারা সক্রিয় ও উদ্যোগী হলে এমন পরিস্থিতি হতো না।
মি: আহমেদ বলেন, অভিযানের আগে প্রতিদিন ২০/২২টি জামিন আবেদনের শুনানি হতো জেলা দায়রা জজ আদালতে, যা এখন কয়েকটিতে নেমে এসেছে।
“সাধারণত এই আদালতে মাদক মামলার আসামীদের জামিন হয় না। এখানে নামঞ্জুর হওয়ার পর আসামীরা উচ্চ আদালতে যান। আর আমাদের এখানে শিশু-কিশোর কিংবা নারী এমন আসামীরা হয়তো জামিন পেয়ে থাকেন”।
তিনি বলেন, “তারপরেও এখন যারা আটক আছেন তাদের দিক থেকে আইনজীবীদের তৎপরতা কম দেখা যাচ্ছে বলে জানান মিস্টার আহমেদ। যদিও কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য কোন মাদক ব্যবসায়ীই গ্রেফতার হননি”।
কক্সবাজারের আইনজীবী আব্দুর রহিম বিবিসি বাংলাকে বলছেন মাদকের বিশেষ করে ইয়াবা মামলার অনেক আসামী এখন জেলখানাকেই নিরাপদ জায়গা বলে মনে করছে।
“বাইরে মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। তাই অনেকেই মনে করছেন এ সময়টা জেলেই থাকি।”
তবে মি: রহিমের অভিযোগ মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশের যোগসাজশ আছে। তারাও এ বিষয়ে অনেক অভিযুক্তকে সহায়তা করছে।
“উখিয়াতে চিহ্নিত একজন মাদক কারবারি অভিযানের আগে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরছিলো। এখন যখন অভিযান শুরু হলো তখনি তাকে আটক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে”।
আব্দুর রহিম বলেন এখন জেলখানাকেই নিরাপদ মনে করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আর সে কারণেই জামিন আবেদনতো নেই বললেই চলে।
আরেকজন আইনজীবী মোহাম্মদ ইউছুপ জানান তার হাতে এমন দু’একটি মামলা আছে যাতে আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছে কিন্তু অভিযান শুরুর পর থেকে আসামীদের তরফ থেকে কেউ তার সাথে যোগাযোগই করছেন না।
কিন্তু কেন আসামীরা এমন আচরণ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মি: ইউছুপ বলেন, “আসলে পরিস্থিতি খারাপ, তাই মাদকের সাথে জড়িত হোক বা না হোক এ ধরণের মামলায় যারা আটক হয়েছেন তারা জেলখানাকেই নিরাপদ মনে করছেন”।
সূত্র, বিবিসি